Header Ads

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন/Important questions about international politics for BCS written exam

 


বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন/Important questions about international politics for BCS written exam

 

 দক্ষিন চীন সাগরের গুরুত্বঃ মুখোমুখি চীন যুক্তরাষ্ট্র

দক্ষিন চীন সাগরে মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের দুটি যুদ্ধ জাহাজ USS Ronald Reagan USS Nimitz জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দক্ষিন চীন সাগরে মহড়া দিচ্ছে। অন্যদিকে ০৫২ ০৫৪ নামের চীনেরও দুটি যুদ্ধ জাহাজ পাশাপাশি অবস্থান নিয়েছে। তাই সেখানে এখন মুখোমুখি চীন যুক্তরাষ্ট্র।

USA বলছে - ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবাধ মুক্ত রাখতে তাদের এই মহড়া। অন্যদিকে চীন বলছে - তারা তাদের নিয়মিত মহড়ার অংশ হিসেবে মহড়া দিচ্ছে। নিজের জলসীমার সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতেই তারা এটি করছে এর সঙ্গে বাইরের কোন দেশকে লক্ষ্য করে এই কার্যক্রম চালাচ্ছেনা।

দক্ষিন চীন সাগর, ভূ-রাজনীতিতে বর্তমান সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ৩৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের এলাকার দক্ষিনে সিঙ্গাপুর মালাক্কা প্রনালী, উত্তরে চীন তাইওয়ান, পূর্বে ফিলিপাইন ব্রনাই এবং পশ্চিমে রয়েছে ভিয়েতনাম। এই অঞ্চলের ৮০ শতাংশ দাবি করে চীন, যার মধ্যে ২৯১ টি দ্বীপ প্রবাল রয়েছে।  

জাতিসংঘ সমুদ্র আইন অনুযায়ী, কোন রাষ্ট্র তাদের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল সামুদ্রিক অঞ্চল দাবি করতে পারে, আর ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল। কিন্তুু চীনের দাবিকৃত অঞ্চল প্রায় ২০০০ কিঃমিঃ এবং তারা সেখানে কয়েকটি কৃত্রিম দ্বীপও নির্মান করছে।

চীন ছাড়াও এই অঞ্চলে ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া তাইওয়ানের মত টি দেশ রয়েছে,যাদের দাবিকৃত ভূখণ্ডে আধিপত্য চীনের। যার ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হচ্ছে।

তো দক্ষিন চীন সাগরের অর্থনৈতিক গুরুত্বটা আসলে কেমন?

USA এর এক হিসাবে এখানে ১১ বিলিয়ন গ্যালন তেল ১৯০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রয়েছে। আর চীনের মতে তা ১২৫ বিলিয়ন গ্যালন তেল ৫০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সুয়েজ পানামা খালের থেকেও বেশি পন্যের আসা যাওয়া এই অঞ্চল দিয়ে, যা প্রায় ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের এবং যার মধ্যে .৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার বহন করে মার্কিন জাহাজ। এই অঞ্চলে রয়েছে বিশ্বের মোট প্রবালের ৩০ শতাংশ, আর এখান থেকে আহরিত হয় পৃথিবীর মোট মাছের ১০ শতাংশ।

এর সামরিক গুরুত্ব কতটুকু?

সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ যার, বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ তারআন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই প্রচলিত কথাটির গুরুত্ব অনেক। সকল পরাশক্তিই জানে super power হতে গেলে সমুদ্র নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। আর এই দিক থেকে দক্ষিন চীন সাগর অনেক তাৎপর্যপূর্ন। কারন, এই অঞ্চল দিয়েই যোগাযোগ রক্ষিত হয় এশিয়া, ইউরোপ আফ্রিকা মহাদেশর। প্রশান্ত মহাসাগর ভারত মহাসাগরেরও রুট এটি। এর সামরিক অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করেই চীনের কুওমিনট্যাং পার্টি ১৯৪৭ সালে Eleven Dash Line এঁকে তাদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে দক্ষিন চীন সাগরকে।  

আবার ১৯৫৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টি Nine Dash Line দ্বারা এই অঞ্চলকে চিহ্নিত করে। এমনকি তাদের ম্যাপ, পাসপোর্টেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রও বসে নেই। ২০১৩ সালের পর থেকে তাদের সামরিক কার্যক্রম এই অঞ্চলে অনেক পরিমানে বৃদ্ধি করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে যুদ্ধ জাহাজও।

আমরা সকলেই জানি কুটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তুু এখানে আপাতত এমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বরং চীন এই অঞ্চলকে ঘিরে ২০ বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। হয়ত যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বিশ্বের সামনে প্রকাশিত হবে।

তুসেডেডিসের ফাঁদ তত্ত্ব চীন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বিবাদ"

"উদীয়মান শক্তি বিদ্যমান পরাশক্তির মধ্যে সংঘাত অনিবার্য " এই তত্ত্বকেই বলা হয় তুসেডেডিসের ফাঁদ তত্ত্ব

তুসেডেডিস কে?

তুসেডেডিস জন্মগ্রহন করেছিলেন প্রাচীন গ্রীসের এথেন্স শহরে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ অব্দে। তিনি ছিলেন একজন সমরবিদ ঐতিহাসিক। তার সময়ে স্পার্টা ছিল খুবই শক্তিশালী, আর তখন এথেন্সও ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছিল। এথেন্সের এই বাড়ন্ত শক্তি দেখে স্পার্টা ভীত হয়ে এথেন্সের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধ হয় এর শেষ পরিনতি। স্পার্টা এথেন্সর এই সম্পর্ক পর্যবেক্ষন করে তুসেডেডিস এই তত্ত্বটি দিয়েছিলেন।

তো বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র চীনের অবস্থা পর্যবেক্ষন করে অনেক বিশ্লেষকই একে তুসেডেডিসের ফাঁদ তত্ত্বের সাথে তুলনা করছেন। যেখানে আমেরিকা হলো বড় পরাশক্তি আর চীন হলো উদীয়মান পরাশক্তি। রাজনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক, কুটনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক সব দিক থেকেই দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ছে। আর এর শেষ পরিনতিতে হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

 
যদিও চীনের প্রেসিডেন্ট শি ঝিনপিং ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এই তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পারিক বুঝাপড়া আরো গভীর করতে চাই আমরা। অন্যান্য কৌশলগত এবং উন্নয়ন বিষয়ক খাতেও আমরা সহযোগিতা বাড়াতে চাই। শি আরো বলেনবিশ্বে তুসেডেডিসের ফাঁদের মত কিছু নেই। বড় দেশগুলো নিজেদের ভুলে এই ফাঁদে পা দিয়েছে এর বেশি কিছু নয়।

তবে চীনের প্রেসিডেন্ট এই তত্ত্ব উড়িয়ে দিলেও বিশ্লেষকেরা কিন্তুু উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কারন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রাহাম অ্যালিসন গত ৫০০ বছরে ঘটা তুসেডেডিসের ফাঁদ এর ১৬টি ঘটনা পর্যবেক্ষন করেছেন। এর মধ্যে ১২টি ক্ষেত্রেই যুদ্ধ হয়েছে।

 

Please share this post………….

No comments