যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার যাত্রা: কোথা থেকে ও কীভাবে শুরু করবেন/The journey to higher education in the United States: where and how to start
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার যাত্রা: কোথা থেকে ও কীভাবে শুরু করবেন/The journey to higher education in the United States: where and how to start
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার উচ্চ মান, ইংরেজি ভাষাভাষী দেশ হওয়া, ফান্ডিং সুবিধা ও জীবনযাত্রার মান। তবে আবেদনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত পুরো যাত্রাটি দীর্ঘ, জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এ সময়ে হতাশা ও অনিশ্চয়তা একেবারে স্বাভাবিক। ‘অ্যাডমিশন হবে, কি হবে না’—এমন উদ্বেগও মাঝেমধ্যে পেয়ে বসে। তবে সুসংগঠিত প্রস্তুতি থাকলে এই দীর্ঘ যাত্রাও সহজ হয়ে উঠতে পারে।
শুরুটা কোথায় করবেন
ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ দেওয়া (IELTS বা TOEFL) আবেদনপ্রক্রিয়ার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। অনেকেই মনে করেন, বেশি স্কোর পেলে ভর্তি বা ফান্ডিং পাওয়ার সুযোগ বেড়ে যায়। তবে বাস্তবে ন্যূনতম রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করলেই যথেষ্ট। অতিরিক্ত স্কোরের জন্য অযথা দুশ্চিন্তা না করে প্রস্তুতির অন্যান্য বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিন।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কৌশল
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তাই উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। প্রথমেই ঠিক করুন, আপনি কোন বিষয়ে পড়তে চান। এরপর দেখুন, কোন বিশ্ববিদ্যালয় সেই বিষয়ে সেরা এবং কোথায় ফান্ডিং সুবিধা বেশি। লোকেশন, কোর্সের কাঠামো, গবেষণার সুযোগ এবং অ্যালামনাই নেটওয়ার্কের বিষয়গুলোও বিবেচনা করুন। ফান্ডিংয়ের সুযোগ যেখানে বেশি এবং যা আপনার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য পূরণে সহায়ক, সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিন।
মাস্টার্স বনাম পিএইচডি : আবেদনপদ্ধতি
মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সাধারণত সেন্ট্রাল অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে আবেদন করা হয়। পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে STEM (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিকস—এই চার বিষয়ের প্রথম অক্ষর মিলিয়ে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে স্টেম এডুকেশন) বিষয়ে প্রফেসরের সঙ্গে আগাম যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, তাঁদের গবেষণা তহবিল থেকেই শিক্ষার্থীদের বেতন এবং অন্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। নন-STEM পিএইচডির ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল অ্যাপ্লিকেশন যথেষ্ট, তবে প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সব সময়ই ভালো। তাঁদের কাজ পর্যালোচনা করুন এবং কীভাবে আপনার দক্ষতা তাঁদের গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা করুন।
ডকুমেন্ট প্রস্তুতি
আবেদনপ্রক্রিয়ার জন্য যে ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে, তা হলো ইংরেজি দক্ষতার সার্টিফিকেট (IELTS/TOEFL), ট্রান্সক্রিপ্ট, স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP), লেটার অব রেফারেন্স (LOR), সিভি বা রেজুমে, রাইটিং স্যাম্পল ও গবেষণার প্রস্তাব। এগুলো সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখলে ও ডেডলাইন মেনে আবেদন করলে সফলতার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
SOP: আপনার গল্প বলার জায়গা
স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP) আপনার আবেদনপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে আপনি আপনার স্বপ্ন, লক্ষ্য ও পছন্দের প্রোগ্রামের সঙ্গে আপনার সংযোগের গল্প বলতে পারেন। SOP লেখার সময় স্পষ্টতা ও প্রাসঙ্গিকতার দিকে নজর দিন। শিক্ষাগত পটভূমি, পেশাগত অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সুসংগঠিতভাবে তুলে ধরুন। একটি ব্যক্তিগত গল্প যোগ করুন, যা দেখায় কেন আপনি এই প্রোগ্রামে আবেদন করছেন এবং এটি আপনার জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ। SOP-এর মাধ্যমে আপনার আগ্রহ, যোগ্যতা ও পরিকল্পনার পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি তুলে ধরুন। এ অংশটি শুধু তথ্য দেওয়ার জন্য নয়, বরং আপনার বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করার সুযোগ। এমনভাবে SOP লিখুন, যা অতিরঞ্জিত না বরং জেনুইন মনে হয়। আপনার লেখার সৃজনশীলতাও এখানে দেখাতে পারেন।
আবেদন করার সময়
আবেদনপ্রক্রিয়া সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে। ফল সেমিস্টার (Fall), যা আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে শুরু হয়, ফান্ডিংয়ের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। ফল সেমিস্টারে স্কলারশিপ, গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ বা ফেলোশিপের সুযোগ বেশি। স্প্রিং (Spring) সেমিস্টার জানুয়ারিতে শুরু হয়, তবে ফান্ডিংয়ের সুযোগ তুলনামূলক কম। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়োরিটি ডেডলাইন থাকে, যা ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে। এ সময়ের মধ্যে আবেদন করলে ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জেনারেল ডেডলাইন সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে হয়। রোলিং অ্যাডমিশনের ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি আবেদন করবেন, ততই ভালো।
এ সময়ে মানসিক চাপ মোকাবিলা করা গুরুত্বপূর্ণ
আবেদনপ্রক্রিয়া দীর্ঘ ও জটিল হওয়ায় হতাশা, অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপ অনুভব করা খুবই স্বাভাবিক। এমন উদ্বেগ অনেক সময় আপনার মনোযোগ ও আত্মবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে এ সময়কে ইতিবাচকভাবে মোকাবিলা করাই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমেই একটি রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিনের কাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করার জন্য একটি পরিকল্পনা মেনে চলুন। এটি শুধু আপনার প্রস্তুতিকে নিয়ন্ত্রিত রাখবে না, বরং মানসিক চাপও অনেক কমাবে। মনে রাখবেন, এই যাত্রা চ্যালেঞ্জিং হলেও এটি শেখার একটি সুযোগ। সফলতা শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোর মধ্যেই নয়, বরং প্রতিটি ধাপের অভিজ্ঞতায়ও লুকিয়ে থাকে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সহায়তা চাইতে কখনো দ্বিধা করবেন না। বন্ধু, পরিবার বা কোনো মেন্টরের সঙ্গে কথা বলুন। মনে রাখবেন, আপনি একা নন, আপনার পাশে সব সময়ই কেউ না কেউ আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য যাত্রা চ্যালেঞ্জিং হলেও এটি আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ সময়টি কেবল নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার নয়, বরং নিজের সক্ষমতা, ধৈর্য ও সম্ভাবনাকে আবিষ্কারেরও সুযোগ। মনে রাখবেন, প্রতিটি চ্যালেঞ্জ একটি নতুন দিগন্ত দেখায়। আপনি যে এই পরিকল্পনা করছেন, এটি সাহসের ও অনুপ্রেরণাদায়ক এবং ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে আপনি এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারবেন। আপনার স্বপ্নপূরণের এই যাত্রায় শুভকামনা রইল।
*লেখক: আফসানা আলম, পিএইচডি শিক্ষার্থী, পাবলিক পলিসি, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস, যুক্তরাষ্ট্র। afsanapreeti@gmail.com.সূত্রঃপ্রথমআলো
Post a Comment